স্বাস্থ্যের বড় নির্দেশক হচ্ছে কোমরের মাপ ******
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের কোমরের মাপ বড়, তাদের রয়েছে হূদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, চিত্তভ্রংশ রোগের বড় ঝুঁকি।
২০০৯ সালের এপ্রিলে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকেরা ৪৪ হাজার সেবিকার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রকাশ করলেন, স্বাভাবিক ওজন রয়েছে এমন সেবিকা, তাদেরও হূদরোগ ও ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়, যদি তাদের কোমরের বেড় বেশি হয়। অন্যান্য গবেষণায় পুরুষদের ক্ষেত্রেও তেমন ঝুঁকি দেখা যায়।
কোমরের মাপকে স্বাস্থ্যের নির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। তবু অনেক চিকিত্সক রোগীর দেহের ওজনকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন এবং তাদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিএমআই হচ্ছে দেহের উচ্চতার সঙ্গে দেহের তুলনামূলক ওজনের পরিমাপ। তবে স্ত্রী-পুরুষের ওপর নানা গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দেহের মোট ওজনের চেয়ে শরীরের কোন স্থান ভার হয়েছে বা বেশি ওজন হয়েছে, স্বাস্থ্যের বিবেচনায় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্চ মাসে জর্নাল অব ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, হূদ্বাহ স্বাস্থ্যের সবচেয়ে দুর্বল নির্দেশক হলো বিএমআই এবং নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা উঁচু মানের কোলেস্টেরল হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, এর ভালো সূচক হলো ‘কোমরের মাপ’।
গবেষণায় দেখা গেছে, একজন নারীর কোমরের মাপ ৩১.৫ ইঞ্চিতে উপনীত হলে স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো বাড়তে থাকে এবং কোমর ৩৫ ইঞ্চি বা এর বেশি হলে ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে কোমর ৩৭ ইঞ্চি হলে ঝুঁকি বাড়তে থাকে আর ৪০ ইঞ্চি বা এর বেশি হলে ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়।
তবে এসব পরিমাপ নেহাতই গড় মান এবং দীর্ঘদেহ বা খর্বকায় লোকের জন্য তত উপযোগী নাও হতে পারে। শিশু বা অন্যান্য আদিবাসী গোত্রে কোমরের মাপ বড় সূচক নাও হতে পারে। যেমন জাপানিদের ক্ষেত্রে পুরুষের কোমর ৩৩.৫ ইঞ্চি হলে ঝুঁকির শুরু। তবে জাপানি মেয়েদের জন্য কোমর ৩৫.৫ ইঞ্চি না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকি তেমন বাড়ে না। ২০০৯ সালের এপ্রিলে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ওবেসিটিতে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিশেষ করে তরুণদের ক্ষেত্রে সার্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনার জন্য কোমর আর উচ্চতার অনুপাত আরও ভালো নির্দেশক।
সহজভাবে বলা যায়, কোমরের মাপ হওয়া উচিত দৈহিক উচ্চতার অর্ধেকেরও কম। তবে কোমর ভারী হলেই সব সময় অস্বাস্থ্য, তাও বলা যায় না। একটি বড় উদাহরণ হলো, জাপানি সুমো কুস্তিগির। তার প্রকাণ্ড আয়তন থাকা সত্ত্বেও একজন ক্ষীণতনু অ্যাথলেটের হূত্স্বাস্থ্যের মতো সজীব হূত্স্বাস্থ্য অর্জন করে থাকতে পারে। সুমো কুস্তিগিরদের মেদ জমা হয় ত্বকের ঠিক নিচে, এই মেদভান্ডার ক্ষতিকারক নয়, শরীরের অন্তর্যন্ত্রের চারধারে যে মেদ, তা-ই হয় দেহ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ।
তবু বেশির ভাগ লোকের ক্ষেত্রে কোমরের মাপ গুরুত্বপূর্ণ। আলবাটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওবেসিটি রিসার্চ ও ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান আর্য এম শর্মা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা জেনে আসছি, যাদের উদরের অভ্যন্তরে রয়েছে মেদের ভান্ডার, তাদের ডায়াবেটিস ও হূদরোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। যাঁরা সুমো কুস্তিগির নন, তাঁদের জন্য এই নির্দেশক খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কোমর ভারী হলে বোঝা যায়, হূিপণ্ড, যকৃত্ ও সাধারণ পেশির চারধারে মেদ জমার আশঙ্কা এবং এতে এ সংকেত পাওয়া যায়, অন্যান্য স্বাস্থ্য-সমস্যা—যেমন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও উঁচু মানের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড মান পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
সামান্য কিছু ওজনও শরীর থেকে ঝরালে বড় সুফল পাওয়া যেতে পারে। ছোট একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২০ জন খুব বেশি স্থূল রোগীকে কম ক্যালোরির খাবার দেওয়া হলো, এরা দেহের ওজনের ২০ শতাংশ ওজন হারাল। এতে তাদের ক্ষেত্রে বিএমআইয়ের ১৯ শতাংশ হ্রাস পেল, তবে কোমরের মাপ হ্রাস পেল ২৩ শতাংশ। ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা গেল, হূিপণ্ডের চারপাশে মেদের স্তর ৩২ শতাংশ সংকুচিত হলো। এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২০০৯ সালের মে মাসে মেডিকেল জর্নাল অব ওবেসিটিতে।
পেটের ভেতর মেদের সঙ্গে সম্পর্কিত স্ট্রেস হরমোন। একটি গবেষণায় ১৮-২৫ বছর বয়সী ৬৭ জন মহিলা, যাঁদের কথন পরীক্ষা ও গণিত পরীক্ষার মুখোমুখি করা হলো, তাদের স্ট্রেস কী পরিমাণ হলো, তা মাপার জন্য রক্ত ও লালা পরীক্ষা করা হলো। যেসব মহিলার স্ট্রেস সবচেয়ে বেশি হলো, তাদের কোমর বেশি ভারী পাওয়া গেল; যাদের স্ট্রেস তেমন হয়নি, তাদের তুলনায়। এই প্রতিবেদনটিও প্রকাশিত হয়েছে ২০০৯ সালের মার্চে ইন্টারন্যাশনাল জর্নাল অব ওবেসিটিতে।
চিকিত্সকেরা বলেন, খাদ্যবিধি মেনে ও ব্যায়াম করে কোমর সংকুচিত করা সম্ভব। অনেকেই এতে সফল হতে সক্ষম হয় না। ডা. শর্মার মতে, কোমর ভারী হলে প্রথম লক্ষ্য হলো ওজন যাতে আর না বাড়ে সেদিকে নজর রাখা এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যায়াম ও খাদ্যের গুণগত মান ঠিক করলে হূদরোগ ও অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি কমানো যায়, ওজন হ্রাসে তেমন সমর্থ না হলেও তা কিছুটা সম্ভব।
ডা. শর্মা বলেন, অবশ্য কেবল ওজন নিয়ে বেশি উত্কণ্ঠিত না হয়ে স্বাস্থ্য রক্ষাই মুখ্য হওয়া উচিত। স্থূলতা মোকাবিলা মানে দেহের ওজন কমানোই কেবল নয়, স্বাস্থ্য উন্নত করাই হলো বড় কথা।
ডায়াবেটিসে জানা দরকার *********
ডায়াবেটিসকে
বলা হয় সারা জীবনের রোগ।এই রোগের কোনস্থায়ী চিকিৎসা নেই।কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা
মেনেচললে ডায়াবেটিসেআজীবন ভাল থাকা যায়।প্রতিদিনই যে কাজগুলো করা উচিত:
০ ডাক্তার বা ডায়াবেটিশিয়ান যে স্বাস্থ্যকর আহারের পরিকল্পনাটি দিয়েছেন তা প্রতিদিন অনুসরণ করে চলা উচিত।
০ সপ্তাহে অন-ত: ৫ দিন শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা উচিত। কোন ধরণের শরীরর্চ্চা বা ব্যায়াম উপযোগী হবে তা ডাক্তারের কাছে জেনে নেওয়া ভালো।
০ ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়ে থাকলে যথাসময়ে ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
০ রক্তের গ্লুকোজ মান চেক্ করে দেখা উচিত নির্দেশমত। প্রতিবার রক্তের গ্লুকোজ চেক করা হলে ফলাফলটি রেকর্ড বইয়ে লিপিবদ্ধ রাখা উচিত।
০ মাঝে মাঝেই দেখতে হবে পায়ে কোনও কাটা, ফাটা, ফোস্কা, ক্ষত, ফোলা বা লাল হয়ে যাওয়া আছে কিনা। পায়ের আঙ্গুলের নখেও ক্ষত আছে কিনা, দেখে নেয়া ভালো।
০ দাঁত ও মাড়ি ব্রাশ করা ও ফ্লস করা উচিত নিয়মিত।
০ ডাক্তার বা ডায়াবেটিশিয়ান যে স্বাস্থ্যকর আহারের পরিকল্পনাটি দিয়েছেন তা প্রতিদিন অনুসরণ করে চলা উচিত।
০ সপ্তাহে অন-ত: ৫ দিন শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা উচিত। কোন ধরণের শরীরর্চ্চা বা ব্যায়াম উপযোগী হবে তা ডাক্তারের কাছে জেনে নেওয়া ভালো।
০ ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়ে থাকলে যথাসময়ে ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
০ রক্তের গ্লুকোজ মান চেক্ করে দেখা উচিত নির্দেশমত। প্রতিবার রক্তের গ্লুকোজ চেক করা হলে ফলাফলটি রেকর্ড বইয়ে লিপিবদ্ধ রাখা উচিত।
০ মাঝে মাঝেই দেখতে হবে পায়ে কোনও কাটা, ফাটা, ফোস্কা, ক্ষত, ফোলা বা লাল হয়ে যাওয়া আছে কিনা। পায়ের আঙ্গুলের নখেও ক্ষত আছে কিনা, দেখে নেয়া ভালো।
০ দাঁত ও মাড়ি ব্রাশ করা ও ফ্লস করা উচিত নিয়মিত।
০ ধূমপান অবশ্যই করবেন না।প্রতিবার চেক্ আপের সময় ডাক্তার যেসব জিনিষ দেখে নেবেন:
০ রক্তের গ্লুকোজ মানের রেকর্ডগুলো: দেখতে হবে কোনও সময় রক্তের গ্লুকোজ খুব কমে বা বেড়ে গিয়েছিলো কিনা।
০ ওজন: শরীরের যথাযথ ওজন কত হওয়া উচিত তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেওয়া ভালো। ওজন বেশি হলে কিভাবে স্বাভাবিক ওজনে নেমে আসা যায়, তাও জানতে হবে।
০ রক্তচাপ: বেশির ভাগ লোক যাদের ডায়াবেটিস তাদের রক্ত চাপ মান থাকা উচিত ১৩০/৮০-এর নিচে। কিভাবে এ মানে পৌঁছানো যাবে তাও জেনে নেওয়া ভালো।
০ ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধের পরিকল্পনা: ডায়াবেটিসের ওষুধ নিয়ে কোনও সমস্যা হলে তাও ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করা ও পরামর্শ নেওয়া উচিত।
০ পদযুগল: পায়ে কোনও ক্ষত আছে কিনা তাও স্বাস্থ্য পরিচর্যাকারী দেখে নেবেন।
০ ব্যায়ামের পরিকল্পনা: সক্রিয় থাকতে হলে কোন ধরণের ব্যায়াম উপযোগী তাও ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।০ আহার পরিকল্পনা: কি খাচ্ছেন, কি পরিমাণ খাচ্ছে, কখন খাচ্ছে সবই আলোচনা করে নেয়া ভালো।
০ ধূমপানের অভ্যাস: এমন বদভ্যাস থাকলে ডাক্তারের কাছে জেনে নেয়া ভালো কি ভাবে একুঅভ্যাস ছাড়া যায়।
** বছরে অন্তত: দু’বার এ পরীক্ষাগুলো বা কাজগুলো করা উচিত:
০ এআইসি টেস্ট: এই রক্ত পরীক্ষাটি বছরে অন্তত: দু’বার করাতে হবে। ফলাফল থেকে জানা যাবে গত দু’তিন মাস রক্তে গ্লুকোজের গড় মান কত ছিলো।
০ রক্তে লিপিড পরীক্ষা: উপবাসী রক্তে করানো উচিত।
০ মোট কোলেস্টেরেল : লক্ষ্য হওয়া উচিত = ২০০-এর নিচে রাখা০ এল ডি এল : লক্ষ্য হবে ১০০-এর নিচে রাখা
০ এইচ ডি এল : পুরুষের জন্য ৪০ এর উপরে। নারীদের জন্য ৫০ এর উপরে।
০ ট্রাইগ্লিসাবাইড : লক্ষ্য ১৫০ এর নিচে রাখা।
০ কিডনির কাজ কর্ম পরীক্ষা করে দেখা
০ প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি রয়েছে কিনা। সম্ভব হলে রক্তে ক্রিয়োটিনিন মান (০.৬-১.২)
০ চোখ বিষ্ফারিত করে পরীক্ষা : চোখের সম্পূর্ণ পরীক্ষা করানো উচিত বছরে একবার
০ দাঁত পরীক্ষা : দাঁতের পরিষ্কার ও চেক্ আপের জন্য বছরে দু’বার ডেন্টিস্টকে দেখানো উচিত।
০ ফ্লু শট্ : প্রতি বছর একবার ফ্লু শট্ নেওয়া ভালো।
০ পদদ্বয় পরীক্ষা : স্বাস্থ্য পরিচর্যাকর্মীকে পা’দুটো পরীক্ষা করে দেখতে বলুন, পায়ের স্নায়ু ও রক্ত চলাচল ঠিক আছে কিনা।
কাটিয়ে উঠুন হতাশা *********
প্রতিযোগিতার
দৌড়ে মানুষ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্র। যান্ত্রিক জীবনে আনন্দ-বিনোদনের স্থান দখল
করে নিয়েছে কাজের ব্যস্ততা। ব্যস্ততা আর কাজের চাপে কেউ হচ্ছেন জয়ী, আর
কেউ যাচ্ছে হেরে। পরাজিত অনেকেই ডুবে যাচ্ছেন হতাশার সাগরে। শুধু কাজের
ব্যস্ততা নয়, অনেকে একাকিত্বের ভাবনায় হচ্ছেন হতাশ। শত কাজের ব্যস্ততায়
নিজেকে ভাবছেন একা, জড় পদার্থ। আবার অনেকে অকারণেই নিজেকে ছোট ভেবে কষ্ট
পাচ্ছে। এর কোনোটিই ঠিক নয়। হতাশার পরিণতি সর্বদাই নেতিবাচক। ঝেড়ে ফেলুন
হতাশা, অবসাদ।
যে ব্যক্তি যত বেশি হতাশ হবে, সে জীবন থেকে তত বেশি পিছিয়ে যাবে। হতাশা শুধু কষ্টই ডেকে আনে, কোনো সাফল্য নয়। মানুষের মস্তিষ্ক তার চিন্তা-চেতনা আর আবেগের স্থান। মস্তিষ্কই নিয়ন্ত্রণ করে যাবতীয় মানসিক বিষয়। মস্তিষ্কে রয়েছে অসংখ্য শিরা-উপশিরা আর স্নায়ু। মন খারাপ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। একটি স্নায়ু অপর স্নায়ুকেও প্রভাবিত করে। ফলে অপর স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে অন্য অঙ্গগুলোর ওপর। ফলে দেহ তার স্বাভাবিক কাজকর্মের গতি হারিয়ে ফেলে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ত্বক ও চুলের ওপর। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে ত্বক অকালেই বৃদ্ধ মানুষের মতো দেখায়। দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো দুর্বল হওয়ার জন্য চুলও ঝরতে শুরু করে। হারিয়ে যায় চুলের ঔজ্জ্বল্য। ত্বকে সৃষ্টি হয় অজস্র ভাঁজ এবং বলিরেখা।
যে ব্যক্তি যত বেশি হতাশ হবে, সে জীবন থেকে তত বেশি পিছিয়ে যাবে। হতাশা শুধু কষ্টই ডেকে আনে, কোনো সাফল্য নয়। মানুষের মস্তিষ্ক তার চিন্তা-চেতনা আর আবেগের স্থান। মস্তিষ্কই নিয়ন্ত্রণ করে যাবতীয় মানসিক বিষয়। মস্তিষ্কে রয়েছে অসংখ্য শিরা-উপশিরা আর স্নায়ু। মন খারাপ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। একটি স্নায়ু অপর স্নায়ুকেও প্রভাবিত করে। ফলে অপর স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে অন্য অঙ্গগুলোর ওপর। ফলে দেহ তার স্বাভাবিক কাজকর্মের গতি হারিয়ে ফেলে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ত্বক ও চুলের ওপর। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে ত্বক অকালেই বৃদ্ধ মানুষের মতো দেখায়। দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো দুর্বল হওয়ার জন্য চুলও ঝরতে শুরু করে। হারিয়ে যায় চুলের ঔজ্জ্বল্য। ত্বকে সৃষ্টি হয় অজস্র ভাঁজ এবং বলিরেখা।
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। ফলে দেহের রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরিণামে হূিপণ্ডের ওপর চাপ পড়ে। হূিপণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। এ জন্য অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে অনেকেরই হার্ট অ্যাটাক হয়। তাই ঝেড়ে ফেলুন সব হতাশা। জীবনকে ভাবতে শুরু করুন নতুন করে। যেকোনো বিপদে মনোবল না হারিয়ে দ্বিগুণ উত্সাহে কাজ করার শপথ নিন। কখনোই নিজেকে ছোট ভাববেন না। যে ব্যক্তি যত উত্ফুল্ল, তার কাজ করার ক্ষমতা তত বেশি। চলার পথে সুখের পিছু ধরেই আসে কষ্ট-বেদনা। তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। জীবনের দুঃখকে দেখতে হবে ইতিবাচক দৃষ্টিতে। আমরা তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। আমাদের দেশে দুঃখ-দুর্দশা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। তাই বলে হতাশ হলে চলবে না। সম্ভাবনাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। দুঃখের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে সুখ। নিজে সুস্থ থাকুন। আশপাশের সবাইকে সুখী করার চেষ্টা করুন। আপনার সামান্য মনোযোগ, সামান্য সচেতনতাই চারপাশের পরিবেশকে করে তুলবে আরও বেশি সুন্দর। বাড়িয়ে তুলুন সবার সঙ্গে আপনার মানসিক যোগাযোগ। এতে দূর হবে আপনার একাকিত্ব। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আপনি অনুভব করবেন বন্ধুত্বের পরশ। নিজেকে বদলে ফেলুন। সর্বদা নিজেকে ভাবুন সবচেয়ে সুখী মানুষ। প্রাণ খুলে হাসুন। দেখবেন, বিষণ্নতা পালিয়েছে হাজার মাইল দূরে। হতাশা, অবসাদ থেকে জন্ম নেয় নানা অসুখ। এ জন্য বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট প্রাণ খুলে হাসুন। মেনে চলার চেষ্টা করুন কিছু বিষয়। আপনার জীবন হোক হতাশামুক্ত আর সাফল্যে ভরপুর।
লক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো—
জীবনের প্রতিটি সমস্যাকে সর্বদা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখুন। যতই বিপদ আসুক, মনোবল হারাবেন না। বিপদ আপনাকে মোকাবিলা করতেই হবে। এই শপথ নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।
সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়ুন। দেখবেন, তাঁরা প্রায় সবাই অক্লান্ত সংগ্রাম করে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তাঁদের জীবনী আপনাকে দেবে অনুপ্রেরণা।
শত ব্যস্ততার মধ্যে অন্তত একটি দিন বা একটি ঘণ্টা প্রিয়জনের সঙ্গে কাটান। বেড়াতে যান কোনো পছন্দের স্থানে। পছন্দের তালিকায় শুধু স্ত্রী, বান্ধবী বা স্বামী নয়, হতে পারে আপনার মা, বাবা, ভাই, বোন বা শ্বশুর-শাশুড়ি। প্রিয়জনের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ুন দূরে কোথাও বা পাশাপাশি বসে টিভিতে পছন্দের কোনো অনুষ্ঠান দেখুন। এতে মন ভালো থাকবে।
নিজেকে কখনোই দুঃখী মানুষ ভাববেন না। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, যার পরিণতি ভয়াবহ। অবসরে ভালো কোনো গল্পের বই পড়ুন, ভালো চলচ্চিত্র দেখুন। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক প্রদর্শনী হয়। এসব স্থানে যান। একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, আপনার চেয়ে আরও অনেক কষ্ট ও অসহায়ভাবে পৃথিবীর অনেকেই দিন যাপন করছে। এই মানুষগুলোর কথা চিন্তা করলে আপনার কষ্ট কমবে।
নিজের চেয়ে বড় ও ভালো অবস্থানে যারা আছে, তাদের দেখে কষ্ট পাবেন না। চেষ্টা করুন তাদের মতো হওয়ার। আপনার সততা আর পরিশ্রম আপনাকে এনে দেবে সাফল্য।
সময়ের অভাবে পছন্দের মানুষের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন। আপনার পছন্দের কোনো উপহার তাকে দিন।
দুঃখের স্মৃতিগুলো বাদ দিয়ে প্রিয় স্মৃতি স্মরণ করুন।
তৈরি করুন একজন ভালো বন্ধু। তার সঙ্গে ভাগ করুন আপনার সব মনোভাব। কষ্ট ভাগ করে নিলে নিজেকে অনেক হালকা মনে হবে। ‘সুখের সঙ্গে দুঃখও অনিবার্য’—এই চরম সত্যটা মেনে নিয়েই আপনাকে পথ চলতে হবে।
ভোরবেলা মুক্ত বাতাসে, খোলা আকাশের নিচে হাঁটুন। হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়ামে দেহের প্রতিটি অঙ্গে, বিশেষত মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে সুষ্ঠুভাবে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। তখন আমাদের দেহের বিষণ্নতা, ক্লান্তি দূর হয়। মনে আসে সতেজ ভাব।
বছরের ছুটির দিনে দূরে কোথাও পিকনিকে যান বা বেড়াতে যান।
অফিসের কর্মীদের সঙ্গে গড়ে তুলুন সুসম্পর্ক। প্রতিযোগিতা যতই থাকুক, কর্মক্ষেত্রে এ মানুষগুলোই আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। এই বন্ধুত্বের পরিবেশ আপনাকেই তৈরি করতে হবে।
অফিসের টেবিল, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারে রাখতে পারেন আপনার প্রিয়জনের ছবি। ছোট্ট ফুলদানিতে প্রিয় কোনো পাতাবাহার বা ছোট্ট ফুলের টব আপনার ঘরের এক কোণে রাখতে পারেন। প্রকৃতির সবুজ রং চোখের পুষ্টি জোগায় এবং ফুল আমাদের মন ভালো রাখে। দেখলেই মন ভালো হয়ে যায় এমন কোনো শোপিস বা ছবি দেয়ালে রাখতে পারেন।
একটানা কাজ না করে একটু বিরতি দেওয়ার চেষ্টা করুন। কাজের মাঝখানে একটু বিরতি পেলে মস্তিষ্কের বিশ্রাম হবে। কম্পিউটারের কাজে দীর্ঘক্ষণ থাকলে একটু বিরতি দেওয়ার চেষ্টা করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট একটানা চোখ বন্ধ করে রাখুন। এতে চোখ ও চোখের আশপাশের মাংসপেশিগুলোর বিশ্রাম হবে। চেহারায় সহজে ক্লান্তির ভাব আসবে না।
নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করুন। নির্জনে কোনো এক স্থানে বসে ২০ থেকে ৩০ মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখুন। জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ভাবতে থাকুন আপনি ভীষণ সুখী মানুষ। আপনার কোনো সমস্যা নেই। জীবনযুদ্ধে আপনি সফল হয়েছেন এবং হবেন। এ ধরনের ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং জোরে শ্বাস নিন। মনে করুন, জীবনের কষ্টগুলো দুঃস্বপ্ন মাত্র। সামনে আপনার সাফল্যের দিন। আপনি যত বেশি ইতিবাচক চিন্তা করবেন, আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ ততই বাড়বে। ধ্যান বা মেডিটেশনে প্রতিটি অঙ্গের ওপর যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মেডিটেশনে বিষণ্নতা দূর হয়। দেহের প্রতিটি অঙ্গ হয়ে ওঠে কার্যকর। তাই প্রতিদিন ধ্যান করুন। সম্ভব না হলে সপ্তাহে অন্তত একটি দিন মেডিটেশন করুন।
বছরে একবার সারা দেহের সব অঙ্গের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। এতে রোগ দ্রুত ধরা পড়বে। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সুষম খাবার খান।
মনকে চিরসবুজ ও প্রফুল্ল রাখুন।
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কৌশল *********
স্মৃতিশক্তি
বাড়াবার ইচ্ছে কমবেশি আমাদের সবার মধ্যেই আছে। আমরা চাই সব কিছু যেন
আমাদের মনে থাকে। বাস্তবে সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু মনে রাখার পরিমাণ বাড়ানো
সম্ভব। এ জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। যেমন : ১. লক্ষ্য করুন
এবং নোট নিন, ২. তথ্য সুশৃঙ্খলিত করুন, ৩. ডায়েরি ব্যবহার করুন, ৪. শরীর
ফিট রাখুন, ৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, ৬. মগজ ব্যায়াম করুন, ৭.
স্মৃতি সহায়ক, ৮. অন্যান্য সহায়ক, ৯. মনে রাখবেন কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
১. লক্ষ্য করুন ও নোট নিন : কোন কিছুকে গুরুত্ব দিয়ে না শুনলে বা না দেখলে তা আপনার মনে থাকবে না। সুতরাং নিজেকে বিষয়টি সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন রেখে গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দিন। যেমন- এইমাত্র যার সঙ্গে আপনার পরিচয় হলো তার নামটি যদি আপনি মনে রাখতে চান তাহলে তা কয়েকবার নিজে নিজে আওড়ান এবং মনের ঠিক কোথায় নামটি রাখছেন খেয়াল করুন। টুকে নেয়াটা খুব ভাল অভ্যাস। প্রয়োজনীয় জিনিস টুকে নিলে তা মনে থাকে ভাল।
২. সুশৃঙ্খল হোন : স্বভাবের দিক দিয়ে গোছানো হলে অনেক কিছুই সহজে মনে থাকে। নির্দিষ্ট জিনিস সব সময় নির্দিষ্ট জায়গায় রাখলে প্রয়োজনের সময় হাতড়ে বেড়াতে হয় না।
৩. ডায়েরি ব্যবহার করুন : ডায়েরিতে তারিখ অনুযায়ী করণীয়গুলো লিখে রাখলে কোন কাজ বাদ পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে এ জন্য মনে পড়ামাত্র কাজটির কথা ডায়েরির নির্দিষ্ট পাতায় লিখতে হবে আর প্রতিদিন ডায়েরি দেখতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি প্রতিরাতে আগামীকালের কাজগুলো দেখে নেন।
৪. শরীর ফিট রাখুন : শরীর সুস্থ থাকলে মনও সুস্থ থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন, পরিমিত আহার করুন, সিগারেট ছেড়ে দিন। কানে শুনতে, চোখে দেখতে অসুবিধা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন, এতে অন্যে কি বলছে কি করছে তা আপনি আর মিস করবেন না। ঘুমের বড়ি না খাওয়াই ভাল। আপনি আরও একটু এ্যালার্ট থাকবেন তাহলে।
৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান : নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর ব্যাপারটা আমাদের অভ্যাসের বাইরে। ফলে রোগ গভীর না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার উপস্থিতি টের পাই না। প্রত্যেকের উচিত প্রতিবছর ডাক্তারকে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। এতে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চোখের বা কানের সমস্যা সহজেই ধরা পড়বে। আপনার বিষণ্নতা থাকলে তাও ধরা পড়বে। বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ সেবন করলে বিষণ্নতা যত কমবে আপনার স্মৃতিশক্তি তত বাড়বে।
৬. মগজকে ব্যবহার করুন : শারীরিক কাজ না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। কেউ যদি কয়েক সপ্তাহ বিছানায় শুধু শুয়েই থাকে তার পা সরু হয়ে যাবে, মাংসপেশীতে টান পড়বে, হাঁটতে অসুবিধা হবে। তেমনি কার্যক্ষমতা কমে যায়। সুশিক্ষিত বুদ্ধিমান ব্যক্তি যাঁরা নিয়মিত বুদ্ধির চর্চা করেন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি হ্রাস তুলনামূলকভাবে কম হয়। তাই ভাল স্মৃতিশক্তি পেতে চাইলে নিয়মিত পড়ুন, শিখুন ও সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ করুন। অলসভাবে বসে থাকলে স্মৃতিশক্তি ভোঁতা হয়ে যায়।
৭. স্মৃতি সহায়ক : মনে রাখার কিছু চমৎকার কৌশল আছে, যেমন- ‘আসহবেনীকলা’-রংধনুর সাত রঙের নাম মনে রাখতে সাহায্য করে। ইংরেজিতে লেফটেন্যান্ট বানানটা মনে রাখা আপনার জন্য খুব কষ্টকর হলে মনে রাখুন- ‘মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া’- শব্দগুলোর ইংরেজি লিখে নিন, বানান পেয়ে গেলেন। মনে রাখার জন্য কল্পনা শক্তির ব্যবহার খুব জরুরি। যে কল্পনাশক্তিকে যত চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারবে তার মনে থাকবে তত বেশি। বিশেষত ভারতীয় বিজ্ঞাপনগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন পণ্যের বিজ্ঞাপনে কি অদ্ভুত সব কল্পনা ব্যবহার করা হচ্ছে। এসবই মনে রাখার পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।
৮. অন্যান্য সহায়ক : দিন তারিখ মনে রাখার জন্য আমরা ক্যালেন্ডার-ঘড়ি ব্যবহার করছি। ঘুম থেকে ওঠার জন্য এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করছি। আজকাল মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রে রিমাইন্ডার নামে একটা ব্যবস্থা আছে- যা আপনাকে কাজের কথাটা মনে করিয়ে দেবে। যে জিনিসটা নিয়ে বাইরে যেতে হবে তা দরজার মুখে রাখুন, ওষুধটা বেসিনের ওপরে তাকে রাখুন- প্রয়োজনের জিনিসগুলো আগেই গুছিয়ে রাখুন, কোন জিনিস ফেলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
৯. কেউই খুঁতবিহীন নয় : অধিকাংশ মানুষ যারা নিজেদের স্মরণশক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নন তারাও যে সব কিছুই মনে রাখতে পারেন, তা নয়। যুবকদের মধ্যে যারা ভুলে যায় তারা হয়ত অজুহাত দেখায়- ‘প্রেমে পড়েছি, মন অন্য দিকে নেই’, ‘পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত’ ইত্যাদি ইত্যাদি। বয়স্করা ভাবেন ‘আমার কি স্মৃতিভ্রংশ দেখা দিল?’ আসলে এরা সবাই স্বাভাবিক। মানুষ একটু আধটু ভুলবেই। যতক্ষণ পর্যন্ত এটা সাধারণ কাজকর্মে ব্যাঘাত না ঘটাচ্ছে, ততক্ষণ দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
সত্যি যদি মনে ভুলে যাওয়া ব্যাপারটা আপনাকে বেশ ভোগায় তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করবেন ততই ভাল।
১. লক্ষ্য করুন ও নোট নিন : কোন কিছুকে গুরুত্ব দিয়ে না শুনলে বা না দেখলে তা আপনার মনে থাকবে না। সুতরাং নিজেকে বিষয়টি সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন রেখে গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দিন। যেমন- এইমাত্র যার সঙ্গে আপনার পরিচয় হলো তার নামটি যদি আপনি মনে রাখতে চান তাহলে তা কয়েকবার নিজে নিজে আওড়ান এবং মনের ঠিক কোথায় নামটি রাখছেন খেয়াল করুন। টুকে নেয়াটা খুব ভাল অভ্যাস। প্রয়োজনীয় জিনিস টুকে নিলে তা মনে থাকে ভাল।
২. সুশৃঙ্খল হোন : স্বভাবের দিক দিয়ে গোছানো হলে অনেক কিছুই সহজে মনে থাকে। নির্দিষ্ট জিনিস সব সময় নির্দিষ্ট জায়গায় রাখলে প্রয়োজনের সময় হাতড়ে বেড়াতে হয় না।
৩. ডায়েরি ব্যবহার করুন : ডায়েরিতে তারিখ অনুযায়ী করণীয়গুলো লিখে রাখলে কোন কাজ বাদ পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে এ জন্য মনে পড়ামাত্র কাজটির কথা ডায়েরির নির্দিষ্ট পাতায় লিখতে হবে আর প্রতিদিন ডায়েরি দেখতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি প্রতিরাতে আগামীকালের কাজগুলো দেখে নেন।
৪. শরীর ফিট রাখুন : শরীর সুস্থ থাকলে মনও সুস্থ থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন, পরিমিত আহার করুন, সিগারেট ছেড়ে দিন। কানে শুনতে, চোখে দেখতে অসুবিধা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন, এতে অন্যে কি বলছে কি করছে তা আপনি আর মিস করবেন না। ঘুমের বড়ি না খাওয়াই ভাল। আপনি আরও একটু এ্যালার্ট থাকবেন তাহলে।
৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান : নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর ব্যাপারটা আমাদের অভ্যাসের বাইরে। ফলে রোগ গভীর না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার উপস্থিতি টের পাই না। প্রত্যেকের উচিত প্রতিবছর ডাক্তারকে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। এতে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চোখের বা কানের সমস্যা সহজেই ধরা পড়বে। আপনার বিষণ্নতা থাকলে তাও ধরা পড়বে। বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ সেবন করলে বিষণ্নতা যত কমবে আপনার স্মৃতিশক্তি তত বাড়বে।
৬. মগজকে ব্যবহার করুন : শারীরিক কাজ না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। কেউ যদি কয়েক সপ্তাহ বিছানায় শুধু শুয়েই থাকে তার পা সরু হয়ে যাবে, মাংসপেশীতে টান পড়বে, হাঁটতে অসুবিধা হবে। তেমনি কার্যক্ষমতা কমে যায়। সুশিক্ষিত বুদ্ধিমান ব্যক্তি যাঁরা নিয়মিত বুদ্ধির চর্চা করেন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি হ্রাস তুলনামূলকভাবে কম হয়। তাই ভাল স্মৃতিশক্তি পেতে চাইলে নিয়মিত পড়ুন, শিখুন ও সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ করুন। অলসভাবে বসে থাকলে স্মৃতিশক্তি ভোঁতা হয়ে যায়।
৭. স্মৃতি সহায়ক : মনে রাখার কিছু চমৎকার কৌশল আছে, যেমন- ‘আসহবেনীকলা’-রংধনুর সাত রঙের নাম মনে রাখতে সাহায্য করে। ইংরেজিতে লেফটেন্যান্ট বানানটা মনে রাখা আপনার জন্য খুব কষ্টকর হলে মনে রাখুন- ‘মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া’- শব্দগুলোর ইংরেজি লিখে নিন, বানান পেয়ে গেলেন। মনে রাখার জন্য কল্পনা শক্তির ব্যবহার খুব জরুরি। যে কল্পনাশক্তিকে যত চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারবে তার মনে থাকবে তত বেশি। বিশেষত ভারতীয় বিজ্ঞাপনগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন পণ্যের বিজ্ঞাপনে কি অদ্ভুত সব কল্পনা ব্যবহার করা হচ্ছে। এসবই মনে রাখার পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।
৮. অন্যান্য সহায়ক : দিন তারিখ মনে রাখার জন্য আমরা ক্যালেন্ডার-ঘড়ি ব্যবহার করছি। ঘুম থেকে ওঠার জন্য এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করছি। আজকাল মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রে রিমাইন্ডার নামে একটা ব্যবস্থা আছে- যা আপনাকে কাজের কথাটা মনে করিয়ে দেবে। যে জিনিসটা নিয়ে বাইরে যেতে হবে তা দরজার মুখে রাখুন, ওষুধটা বেসিনের ওপরে তাকে রাখুন- প্রয়োজনের জিনিসগুলো আগেই গুছিয়ে রাখুন, কোন জিনিস ফেলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
৯. কেউই খুঁতবিহীন নয় : অধিকাংশ মানুষ যারা নিজেদের স্মরণশক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নন তারাও যে সব কিছুই মনে রাখতে পারেন, তা নয়। যুবকদের মধ্যে যারা ভুলে যায় তারা হয়ত অজুহাত দেখায়- ‘প্রেমে পড়েছি, মন অন্য দিকে নেই’, ‘পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত’ ইত্যাদি ইত্যাদি। বয়স্করা ভাবেন ‘আমার কি স্মৃতিভ্রংশ দেখা দিল?’ আসলে এরা সবাই স্বাভাবিক। মানুষ একটু আধটু ভুলবেই। যতক্ষণ পর্যন্ত এটা সাধারণ কাজকর্মে ব্যাঘাত না ঘটাচ্ছে, ততক্ষণ দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
সত্যি যদি মনে ভুলে যাওয়া ব্যাপারটা আপনাকে বেশ ভোগায় তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করবেন ততই ভাল।
সুস্থ থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ব্যায়াম বা শরীর চর্চা প্রতিটি পূর্ণ
বয়স্ক মানুষের করা বাঞ্জনীয়। ব্যায়াম শুধু শরীরকে সচল ও ফিট রাখে তাই নয়,
ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের খারাপ চর্বি বা ব্যাড কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমে
এবং ভালো চর্বি বা গুড কোলেষ্টেরল এইচডিএল-এর মাত্রা বাড়ে। পাশাপাশি
ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ত্বরান্বিত হয় এবং দ্রুত রক্ত চলাচলের
কারণে হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমতে পারেনা। ফলে হার্টে ব্লক তৈরীও হতে
পারে না, পাশাপাশি যাদের হার্টের রক্তনালীতে ব্লক বা খানিকটা চর্বি জমেছে
সেক্ষেত্রেও ব্যায়াম রক্তনালীতে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয়না। এছাড়া নিয়মিত
ব্যায়াম করলে শরীর মুটিয়ে যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পায়। এমনকি যারা নিয়মিত
ব্যায়াম করেন তাদের মানসিক চাপ কমে, প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন-ত: ৫দিন
ব্যায়াম করা উচিত। ব্যায়াম বলতে শরীর চর্চা, সাতার, সাইক্লিং, ট্রেডমিল,
হাঁটা, জগিং ইত্যাদি বুঝায়।
তাই যার যে ধরণের ব্যায়ামের সুযোগ সুবিধা আছে তিনি সে ধরণের ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিদিন অন-ত: ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। যাদের দুবেলা ব্যায়াম করার অভ্যাস আছে তাদের সকালে ও বিকালে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করলে কোন ক্ষতি নেই। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো। সকালে ব্যায়াম করতে হলে খানিকটা জগিং করে তারপর ভারী ব্যায়াম করুন।
তাই যার যে ধরণের ব্যায়ামের সুযোগ সুবিধা আছে তিনি সে ধরণের ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিদিন অন-ত: ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। যাদের দুবেলা ব্যায়াম করার অভ্যাস আছে তাদের সকালে ও বিকালে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করলে কোন ক্ষতি নেই। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো। সকালে ব্যায়াম করতে হলে খানিকটা জগিং করে তারপর ভারী ব্যায়াম করুন।
দিনের সব সময় কর্মক্ষম থাকুন **********
বসে দিন কাটানোর অভ্যাস বদলানো যায় না?
নিউইউর্ক সিটির মন্টেফায়োরে মেডিকেল সেন্টারে ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের প্রফেসর বরার্ট ওস্টাফিল্ড বলেন, ‘নিজের জীবন যাপনের প্রভু তো নিজেই।’ ডা: ওস্টফিল্ড জোর দিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে অভ্যস- হলে, নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করলে, সুষম খাবার খেলে বড় রকমের পরিবর্তন আনা যায় জীবনে। ‘দিনে বসে থাকার যে জীবন-এ হলো হৃদ স্বাস্থ্যর জন্য বড় বিপর্যয়-সর্বোপরি সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যই। আমাদেরকে সক্রিয় হতে হবে, ডেস্কে বসে বসে বা সোফায় সারাদিন বসে দিন কাটানোর জন্য জীবন নয়।’
ডাক্তারকে দেখান এবং সচল হন, চলমান হন। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের বিশ্লেষকরা হৃদস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য হৃদস্বাস্থ্যকর ব্যায়ামের একটি কর্মসূচী বাতলে দিয়েছেন। এর মূল কথা হলো সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনে ৩০-৬০ মিনিটের মাঝারি ধরনের শরীরর্চ্চা। তবে যে কোনও ব্যায়ামের কর্মসূচী শুরু করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করা ভালো। ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো -
০ যদি হয় মধ্য বয়স বা এর বেশি বয়স
০ সমিতি নিষ্ক্রিয় জীবন
০ শরীরের ওজন বেশি
০ হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে
০ অন্য কোনও রোগ রয়েছে সক্রিয় থাকার উপায়, ডাক্তার বলে দিলেন, এবার শুরু হোক শরীরের চর্চা।
১. প্রথমে গা গরম এরপর শীতল হওয়া: প্রথমে হাত পা একটু ছোড়াছুড়ি করে, স্ট্রেচিং করে গা গরম করা, এতে হাড়ের গিটের নমনীয়তা বাড়বে, বাড়বে পেশির নমনীয়তা। পা, পিঠ, কোমর স্ট্রেচ কর এবং এরপর পাঁচ মিনিট হাটা। এরপর ব্যায়ামের পর্ব শেষ করে এরকম হালকা স্ট্রেচিং করে শীতল হওয়া।
২. হার্টের স্পন্দন হার যেন বাড়ে: হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর ব্যায়াম প্রয়োজন। তাই করা চাই এরোবিক ব্যায়াম। দ্রুতহাটা, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, গলফ খেলা। সপ্তাহের প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট।
৩. দেহে হোক শক্তি বৃদ্ধি: স্ট্রেংথ ট্রেনিং যেমন ভার উত্তোলন, ইয়োগাব্যায়াম, পুশআপ, বৈঠক, ডাম্ববেল ভাজা এমনকি মনোহারী দোকানের বাজার থলিতে করে বাসায় নেয়া, সিড়ি বেয়ে উঠা, লন্ডির কাপড় তুলে নিয়ে হাটা-এসব করলে শরীরের সার্বিক বলশক্তি, ভারসাম্য, সমন্বয় ও পেশিটোল বাড়বে।
৪. কাজের ফাঁকে ফাঁকে শরীর চর্চা: কাজের ফাঁকে ফাঁকে বা অলস অবসর সময়ে করা যায় উঠ-বস, আসন পিডি হয়ে বসা, হাতের গুল ফুলানো-এসব করা যায় টিভি দেখতে দেখতে। ফোন করার সময় হাটা, উঠ বস, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা। গাড়ি দূরে পার্ক করে হেটে অফিসে যাওয়া বা বাড়িতে আসা। প্রতিদিনের হাটার সময় পেডোমিটার পরে নেওয়া।
৫. এসব লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হওয়া: জিমে যোগ দিতে পারেন, ফিটন্যাস প্রোগ্রামে, বন্দুদের সঙ্গে একত্রে শরীরচর্চা আরও প্রনোদিত করবে এসব কাজে। ‘ব্যায়াম হলো প্রকৃত যৌবন ঝর্ণা।’ বলেন ওস্টফিল্ড’ হাটা উপবোগ করলে, হাটুন। টেনিস খেলতে পছন্দ, টেনিস খেলুন। কেন নয় ওয়াটার পলো? যে শরীর চর্চা উপভোগ্য মনে হবে তা করলেই ভালো হবে। ব্যায়াম না করার চেয়ে যে কোন ব্যায়ামই শ্রেয়।
সুস্থ সবল হার্ট চাইলে কি করতে হবে **********
১. নিয়মিত ব্যায়াম
২. সুষম খাদ্য গ্রহণ
৩. মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা পরিহার এবং ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিত্যাগ
নিয়মিত ব্যায়ামসুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম অপরিহার্য। হার্টকে সবল রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। ব্যায়াম করার জন্য সুপার এ্যাথলেট হওয়ার প্রয়োজন নেই। যে কেউ ব্যায়াম করতে পারে। ব্যায়ামকে আনন্দের বিষয় মনে করলে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়। এমন ব্যায়াম নির্বাচন করতে হবে যেটা করতে ভালো লাগে। গ্রুপ করেও ব্যায়াম করা যায়। যেমন-ফুটবল, বাস্কেট বল, ব্যাডমিন্টন প্রভৃতি খেলার মাধ্যমে আনন্দ যেমন পাওয়া যায় তদ্রুপ ব্যায়ামও হয়। যে কেউ যে কোনভাবে অনুশীলন করতে পারে। যেমন-হাঁটা, দৌড়ানো, দড়ি খেলা, নাচা, বাইসাইকেল চালনা, সাঁতার কাটাসহ অসংখ্য কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যায়াম হয়। শারীরিক পরিশ্রমও এক ধরনের ব্যায়াম। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে শারীরিক পরিশ্রম এবং নিয়মিত ব্যায়াম খুবই প্রয়োজন।
০ নিয়মিত হাঁটুন। প্রথমে হাঁটার পরিমাণ ১০-১৫ মিনিট করুন এবং ধীরে ধীরে ৩০ মিনিটে নিয়ে আসুন। সকালের নাস্তার পূর্বে এবং রাতের খাবারের পরে হাঁটা ভাল।
০ কাছের কোন দোকানে যেতে চাইলে রিকসা বা গাড়ির পরিবর্তে হাঁটুন অথবা সাইকেল ব্যবহার করুন।
০ লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন কিংবা কাঙ্খিত ফ্লোরের ২-৩ ফ্লোর আগেই নেমে বাকিটুকু সিঁড়ি দিয়ে নামুন।
০ গন্তব্য বাস স্টপেজের কিছুদূর আগেই নামুন এবং সেখান থেকে হেঁটে গন্তব্যস্থলে পৌছান।
০ নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ক্যালেন্ডারে চিহ্ন দিয়ে রাখুন, কবে কখন ব্যায়াম করবেন।
০ যদি সিডিউল মিস হয়ে যায় তবে অন্যদিন তা করে নিন। ব্যায়াম সপ্তাহে ৩-৪ বার ৩০-৬০ মিনিট করার চেষ্টা করুন।
০ বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করুন। যেমন-একদিন হাঁটুন, অন্যদিন সাঁতার কাটুন, এর পরদিন সাইকেল চালান।
০ অনুশীলনের সময় এবং পরে পানি পান করুন।
০ মেডিটেশন করা হার্টের জন্য খুব ভালো। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে মেডিটেশন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। কারণ মেডিটেশনের মাধ্যমে যে মানসিক চাপ মুক্ত হওয়া যায় তা শরীরের নিজস্ব পুনর্গঠন প্রণালী আর্টারীর দেয়ালের চর্বি কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
০ ৪০ বছরের অধিক বয়সে হঠাৎ করে নতুন কোন ব্যায়াম শুরু করা উচিত নয়। পূর্বের ব্যায়ামগুলো করাই ভাল।
০ ব্যায়াম করার সময় কোন রকম শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে এবং অনতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
০ নিয়মিত প্রার্থনা করুন, এতে মন ভাল থাকে।
সুষম খাদ্য গ্রহণবেঁচে থাকার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। সুস্থ হার্টের অধিকারী হওয়ার জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাস একান- জরুরী। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং দারিদ্রতা বিভিন্ন রোগের কারণ। যেমন সুষম খাবার (Balanced Food) সম্পর্কে অনেকে জানে না। গরীবরা সুষম খাবারের অভাবে অনেক সময় অপুষ্টিতে ভোগে। অপরদিকে ধনীরা সুষম খাবারের কথা না জেনে ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার খেয়ে সঠিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হন। বর্তমান প্রজন্মের কাছে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার অত্যধিক পছন্দের। এছাড়া তারা কায়িক পরিশ্রম করতে চায় না। এই ফাস্টফুড খাওয়ার দরুন এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবে নারী, শিশু, উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যেমন-ওবেসিটি বা শারীরিক স্থূলত্ব, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির রোগ, ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পেটের পীড়ার মত জটিল সমস্যা। অথচ আমাদের চারিদিকে নানান ধরনের শাক-সবজি রয়েছে। দেশীয় ফল যেমন-কলা, কামরাঙ্গা, আমলকী, আনারস, পেঁয়ারা, পেঁপে, বড়ই, আমড়া, জলপাই, কাঁঠাল, ডালিম, লেবু ইত্যাদি রয়েছে। যেগুলো যেমন সস্তা তেমন সহজলভ্য। এই সব ফল-মূল খাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব। সুষম খাদ্য গ্রহণ জীবনকে সুন্দর করে তোলে।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার:
০ প্রচুর পরিমাণে ফল-মূল, শাক-সবজি খান
০ অতিরিক্ত লবণ এবং চিনি গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। প্রতিদিন ৩ গ্রাম এর অধিক লবণ গ্রহণ করা উচিত নয়।
০ সকালে নাস্তা এবং দিনে তিন বার খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।
০ কড়া এবং অতিরিক্ত তেলে ভাজার পরিবর্তে ভাঁপ, সিদ্ধ, ঝলসানো, বেকিং করে রান্না করতে হবে অর্থাৎ রান্নার প্রণালীটি স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।
০ মিষ্টি এবং গুরুপাক জাতীয় খাবার ক্রয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
০ প্রতিদিন অন্তত: ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
০ খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের শস্য জাতীয় খাদ্য দ্রব্য রাখুন।
০ কম চর্বিযুক্ত এবং চর্বিবিহীন খাবার বেছে নিন।
০ উদ্ভিদ জাতীয় তেল যেমন-সানফ্লাওয়ার, কর্ণ অয়েল খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করুন।
০ মাছ, মুরগীর মাংস, সীম এবং ডাল জাতীয় যে কোন খাবার ও চর্বিবিহীন মাংস গ্রহণ করুন।
০ ডিমের কুসুম, চিংড়ী মাছ, গরু, খাসীর মাংস এবং মগজ পরিহার করুন।
০ খাবারের বিভিন্ন ক্ষতিকর কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।
মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা পরিহার এবং ধূমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিত্যাগ হার্টের কাজ হলো পরিশুদ্ধ রক্ত সমস্ত দেহে সরবরাহ করা। যদি কেউ ধূমপায়ী হয়, এ্যালকোহল পান করে কিংবা নিষিদ্ধ ড্রাগ নেয় তাহলে তার হার্টের অতিরিক্ত পরিশ্রম হয়। অধিক পরিশ্রম করলে আমরা যেমন পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ি তদ্রুপ হার্টও ক্লান্ত হয়ে যায়। এরূপ দীর্ঘদিন চলতে থাকলে হার্ট রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে ধূমপান হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদরোগে মৃত্যুর হার বহুগুণে বাড়ে। সুতরাং ধূমপান করা মোটেই উচিত নয়। কেউ ধূমপায়ী হলে এখনই ছেড়ে দিন। গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয়েছে যেসব ধূমপায়ী ১০ বছর যাবৎ ধূমপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করেছেন তাদের হঠাৎ করে হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক কমে গেছে। যে কোন ধরনের নেশা জাতীয় ড্রাগ হার্টের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই সকল নেশা জাতীয় দ্রব্য ত্যাগ করা উচিত। এমন কি ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোন ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। উপরের নিয়মগুলো মেনে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং সুস্থির জীবন-যাপনের মাধ্যমে হৃদরোগ প্রতিরোধ অনেকটাই সম্ভব।
No comments:
Post a Comment